
নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ ও বিতর্ক কাটিয়ে উঠে সরকার ‘অনানুগত্য’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন করে গেজেট প্রকাশ করেছে। বুধবার রাতে জারি করা হয়েছে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’, যা অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
আগের অধ্যাদেশে সরকারের ‘বৈধ আদেশ’ অমান্য করাকে ‘অনানুগত্যের অপরাধ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। এবার সেই অস্পষ্ট ও বিতর্কিত শব্দটি সরিয়ে এটিকে ‘সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশের ৩৭ক ধারায় ‘সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান’ হিসাবে তিন ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে:
(ক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করা বা আইনসম্মত কারণ ছাড়া সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র বা নির্দেশ অমান্য করা বা এর বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করা বা অন্য কর্মচারীকে এমন কাজে প্ররোচিত করা;
(খ) ছুটি বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সমবেতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা বা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখা;
(গ) কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধা দেওয়া।
এ ধরনের আচরণকে ‘সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং এর বিরুদ্ধে নিম্নপদে অবনমন, বাধ্যতামূলক অবসর বা চাকরি থেকে বরখাস্তের মতো শাস্তি দেওয়া যাবে।
পূর্বের অধ্যাদেশে যে ধারায় বলা হয়েছিল যে, কোনো কর্মচারী যদি এমন কাজ করেন যা অন্যদের মধ্যে ‘অনানুগত্য’ সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বা কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টি করে, সেই ধারাটি এবার সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশে তদন্ত কমিটি গঠনের বিধানও পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হতো, কিন্তু এখন তিন সদস্যের কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। কমিটিতে অন্তত একজন নারী সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত কর্মচারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।
তবে আগের অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান ছিল, যা নতুন অধ্যাদেশে রাখা হয়নি।
এই সংশোধনের পটভূমি হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইনের সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির প্রস্তাব অনুমোদন করে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে ২৪ মে থেকে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে সরকার প্রথম অধ্যাদেশটি জারি করে।
সেই অধ্যাদেশে ‘৩৭ক’ ধারা যুক্ত করে বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা যদি অনানুগত্য সৃষ্টি করেন বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন বা কর্তব্য পালনে বাধা দেন, তবে সাত দিনের নোটিস দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এটিকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালান।
এ পরিস্থিতিতে ৪ জুন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিটি আন্দোলনকারী কর্মচারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশটি সংশোধনের সুপারিশ করে।
অবশেষে ৩ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদ এই সংশোধিত অধ্যাদেশটি আনুমদন করে এবং এখন তা আনুমদিত হিসাবে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে।