৫ই অক্টোবর, ২০২৫, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩২

মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন; রয়েছে নৈতিকতার অবক্ষয় ও স্বার্থের দ্বন্দ্বও।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের ‘১০টি রোগ’ শনাক্ত করার কথা বলছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে স্বাস্থ্য খাতের অর্জন ও সংস্কার পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।

এদিন ঢাকার শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১০টি সংকটকে ‘রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”

১০ সংকটের তালিকায় রয়েছে— স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন; অতিরিক্ত কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যেখানে ঢাকার বাইরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই বললেই চলে; বিশেষায়ণ নির্ভর চিকিৎসা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাকে উপেক্ষা; স্বচ্ছতার অভাব ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি; উৎসাহ ও মনোবলহীন স্বাস্থ্য সেবাদানকারী।

তালিকায় আরও রয়েছে— মনন ও মানসিকতার অভাব; নৈতিকতার অবক্ষয় ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব; যন্ত্রপাতি, ওষুধের কাঁচামাল, এমনকি চিন্তা নিয়েও বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা; নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব।

লিখিত বক্তব্যে এসব সংকট তুলে ধরে সায়েদুর রহমান বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বুঝতে প্রথমে তারা সাধারণ নাগরিকের কথা শুনেছেন। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও অংশীজনের মতামতও নেওয়া হয়েছে।

“আমাদের বিশ্বাস, স্বাস্থ্য খাতের যেসব সমস্যাকে আমরা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছি, তার অনেকটাই সারাতে পারব। যেগুলো পুরোপুরি সারাতে পারব না, সেগুলোর নিরাময় প্রক্রিয়া অন্তত শুরু করে দিতে পারব, যেন ভবিষ্যতে যারা রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্ব পাবেন, তারা শেষ করতে পারেন।”

সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বেশকিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মেডিকেল, ডেন্টালসহ স্বাস্থ্য শিক্ষায় সব ধরনের পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।

“আমাদের বিশ্বাস নিয়োগ ও পদায়ন হওয়া উচিত মেধা, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে। এ কারণে আমাদের পদায়ন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও মেধাভিত্তিক করতে একটি স্বচ্ছ স্বয়ংক্রিয় মেট্রিক্স চালু করেছি।”

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বিপুল জনশক্তির প্রয়োজন হলেও পিএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গড়ে তিন বছর সময় লাগে। এজন্য স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা হবে।

“মানহীন মেডিকেল কলেজ দেশের জন্য ৩০-৪০ বছরের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। সরকারি বেসরকারি এসব মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা হবে।”

সায়েদুর রহমান বলেন, মেডিকেল কলেজের হাসপাতালকে একাডেমিক এবং মেডিকেল সার্ভিস- এই দুই ভাগে ভাগ করা হবে। এতে মানুষ সত্যিকারার্থে সেবা পাবেন। শয্যা সংকট সমাধানে হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। স্বাস্থ্য সেবার বিকেন্দ্রীকরণে নারী স্বাস্থ্যের জন্য দক্ষিণাঞ্চলে ইনস্টিটিউট, উত্তরাঞ্চলে স্বাস্থ্য নগরী ও প্রবীণ স্বাস্থ্যের জন্য পুর্বাঞ্চলে অনেকগুলো স্থান প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে চিকিৎসা সেবা বিকেন্দ্রীকরণ হবে, ঢাকামুখী প্রবণতা কমবে।

সায়েদুর রহমান বলেন, সবচেয়ে উপেক্ষিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতেও পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা এবং নগরাঞ্চলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আলাদা করা হবে।

“প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এটি একটি আদায়যোগ্য উপাদান হিসেবে সংবিধানে সংরক্ষিত হবে। এখন সাত হাজার চিকিৎসকের পদ খালি আছে, বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজার চিকিৎসক নেওয়া হবে। ৩২০০ নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।”

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আমাদের ঢেলে সাজাতে হচ্ছে। আমরা দেশের স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করি।”

ওষুধের প্রাপ্যতার প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে ওষুধ শিল্পের সংকটে পড়ার কথা বলছে বাংলাদে ঔষধ শিল্প সমিতি।

এ বিষয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, সরকার কার স্বার্থ দেখবে- এটা খুবই জটিল বিষয়।

“এই ভারসাম্যটা হচ্ছে, নাগরিকের জন্য মানসম্মত ওষুধ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে ন্যায়সঙ্গত মুনাফার সুযোগ রাখতে হবে, যেন ওষুধ শিল্প একটা ভায়াবল অবস্থায় থাকে। আমি নিশ্চিত না ওনারা কেন এই কথা বলছেন। আপনারা যেকোনো ওষুধ কোম্পানির ডিক্লেয়ার্ড রিপোর্টে তাকান, আমরা এখন পর্যন্ত যা দেখেছি, কোথাও কোনো ওষুধ কোম্পানিকে অস্তিত্বের সংকটে পড়তে হয়নি।”

সায়েদুর রহমান বলেন, সরকারের অবস্থান স্পষ্ট, কোনোভাবেই ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ন্যায়সঙ্গত মুনাফার সুযোগবঞ্চিত করা হবে না।

“আমরা তাদের ক্ষতি করতে চাইব না। আবার মানুষের কাছে ওষুধের প্রাপ্যতার প্রশ্নে কোনো ছাড়ও দিতে চাই না।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • 0
  • 0
© 2025 Dhumketu . All Rights Reserved. || Created by FixiFite WEB SOLUTIONS.