
পেনশন বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
নতুন অর্থ বছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর চলমান বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসূচি যুক্ত করার কথা জানিয়েছে সরকার।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা—সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে পেনশন বাবদ থাকছে ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।
ফলে পেনশন ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
তবে আগামী অর্থবছরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদে সরকার যে প্রিমিয়াম দেয়, সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগ প্রকাশিত সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট প্রতিবেদনে শ্রমবাজারের উন্নীতিকরণ, সামাজিক ইনস্যুরেন্স, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, কারিগরি শিক্ষা সহায়াতার বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে বয়স্কভাতার সুবিধাভোগী ৯৯ হাজার জন বাড়ানো হবে। বিধবা ও স্বামীনিগৃহীতা মহিলা সুবিধাভোগী বাড়ানো হবে এক লাখ ২৫ হাজার জন। প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা বৃত্তির সুবিধাভোগী বাড়ানো হবে এক লাখ ৯৭ হাজার জন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠী খাতে সুবিধাভোগী বাড়ানো হবে ৯৪ হাজার জন। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের সুবিধাভোগী বাড়বে ২ লাখ। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী বাড়বে এক লাখ ১৬ হাজার জন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সুবিধাভোগী বাড়বে দুই লাখ জন। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপবৃত্তির সুবিধাভোগী বাড়বে ৯ লাখ ৯০ হাজার জন।
এ ছাড়া সরকার এখনকার তুলনায় ১১ লাখ ৪৭ হাজার বেশি ব্যক্তিকে ওএমএস সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৩ লাখ ৩৭ হাজার জনকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আর আগামী অর্থবছরে ৫০ হাজার বেশি মানুষ পেনশন সুবিধা পাবেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সঠিক ব্যক্তি যাতে উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচিত হন সে লক্ষ্যে ‘ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি (ডিএসআর)’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
“সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যাপ্তি এবং গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। এ ক্ষেত্রে পেনশন ব্যতীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।”
২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে বেশ কিছু ভাতার হারও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতার মাসিক হার ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায়, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের মাসিক ভাতা ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায়, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রদত্ত মাসিক ভাতার হার ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতার হার ৬৫০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিয়েছি।”
২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি (২৪-২৫ অর্থবছর) বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি দেশের ৫৪ তম বাজেট এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির উপকারভোগী ও ভাতার পরিমাণ নিয়ে মন্তব্য না করে এই কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও সঠিক ব্যক্তি নির্বাচনের দিকে বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা।
তিনি বলেন, “তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ক্ষেত্রে মিস টার্গেটিং যেন না হয়। সুবিধাভোগী নির্বাচনে ক্রাইটেরিয়াগুলো হালনাগাদ করা দরকার। তালিকাটাও কিন্তু হালনাগাদ করা দরকার। পাশাপাশি শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যেন একটা বরাদ্দা রাখা হয়। সেই বরাদ্দটি হতে হবে তাদের কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে।”