২১শে আগস্ট, ২০২৫, ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২

পাওয়ার-অব-এটর্ণি বলতে এমন এক দলিল কে বোঝায় যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার পক্ষে উক্ত দলিলে বর্নিত কার্য-সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা প্রদান করেন। সুতরাং,পাওয়ার-অব-এটর্নি’র অধীনে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি মূল মালিকের ন্যায় প্রায় এক-ই ক্ষমতা উপভোগ করে থাকে।

পাওয়ার-অব-এটর্নি প্রধাণত দুই প্রকা্রঃ

১। প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্নি; এবং
২। অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণি

অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণিঃ

স্থাবর সম্পতি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের বা loan নেওয়ার বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক প্রদানের জন্য প্রদত্ত পাওয়ার-অব-এটর্ণিকে উদ্দেশ্যে অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণি বলে। এরুপ পাওয়ার আব এটর্ণি-তে পাওয়ার গ্রহীতার মূল মালিকের ন্যায় প্রায় এক ই ক্ষমতা থাকে। অ-প্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার-অব-এটর্ণি’র ক্ষেত্রে পাওয়ার গ্রহীতার মৃত্যু হলে বা আইনগতভাবে দলিল সম্পাদনে অক্ষম হলে উক্ত মৃত বা অক্ষম পাওয়ার গ্রহীতার বৈধ ওয়ারিশ বা স্থলবর্তীর উপর দলিল থেকে সৃস্ট দায় বা অধিকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্পিত হবে।

 

পাওয়ার অব অটর্ণী বা আমমোক্তার নিয়োগ-পদ্ধতি

যাঁরা সম্পত্তি ভোগ দখল করেন, রণাবেণ করেন, সম্পত্তি কেনা-বেঁচা করে থাকেন তাঁদের জানা উচিৎ পাওয়ার অব অ্যাটর্ণী বা আমমোক্তার নিয়োগ-পদ্ধতি সম্পর্কে। ধরুন, আপনি অঢেল সম্পত্তির মালিক। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। ছেলেমেয়েরাও চাকুরী কিংবা বিবাহ সূত্রে আপনার কাছ থেকে দূরে থাকেন। আগের মতো জমিজমা দেখাশোনা করতে পারছেন না। জায়গাজমি যা আছে আপনার মৃত্যুর পরে তো ছেলেমেয়েদেরই হবে। কিন্তু তারা এখন কাছে নেই। তাই আপনি ঠিক করলেন বিশ্বস্থ কাউকে জায়গাজমি দেখাশোনার দায়িত্ব দেবেন। কিন্তু কীভাবে দায়িত্ব দিতে হবে? আপনাকে এখন যা করতে হবে তা হচ্ছে ওই বিশ্বস্থ ব্যাক্তির উপর পাওয়ার অব অ্যার্টনি বা আমমোক্তারনামা করতে হবে। তা হতে হবে লিখিত। এটি একটি আইনগত দলিল। স্ট্যাম্প আইন অনুযায়ী যে দলিল দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে অপর কোনো ব্যক্তির পে হাজির হয়ে মতা প্রদান করা তাকে আমমোক্তারনামা দলিল বলে। যাকে মোক্তার নিয়োগ করা হলো তিনি মূল মালিকের পে সম্পত্তির দান, বিক্রি, হস্তান্তর, রণাবেণ, বন্ধক রাখা, খাজনা প্রদান করে থাকেন। আমমোক্তারনামা দলিলে স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে যাকে পাওয়ার বা মতা দেওয়া হলো তিনি কী কী করতে পারবেন, কিংবা পারবেন না। সাধারণত মোক্তারনামা দুই প্রকার। একটি হচ্ছে সাধারণ মোক্তারনামা, যাকে আমমোক্তারনামা বলা হয়। আরেকটি হচ্ছে খাস মোক্তারনামা, যাকে বিশেষ মোক্তারনামা বলা হয়।

সাধারণত মোক্তারনামায় মোক্তারদাতার পে ব্যাপক মতা দেওয়া হয় কিন্তু বিশেষ মোক্তারনামা সম্পাদন করতে হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য। সাধারণত আমমোক্তারনামা যেগুলো জমিজমা হস্তান্তরের সঙ্গে জড়িত নয়, সেগুলো নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারি করে নিলে হয়। কিন্তু জমিজমা হস্তান্তরসংক্রান্ত মোক্তারনামা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করাতে হবে, নইলে এর আইনগত ভিত্তি থাকে না। রেজিস্ট্রেশন দলিল সম্পাদনের তিন মাসের মধ্যে করতে হবে। কোনো মামলা-মোকাদ্দমা পরিচালনার েেত্রও আমমোক্তারনামা নিয়োগ করা যায়। এ েেত্র আদালতের অনুমতি লাগবে। ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামার েেত্র নতুন নিয়ম করা হয়েছে। যে কোনো দলিল হস্তান্তর, ক্রয়, বিক্রয়, উন্নয়ন এবং ঋণগ্রহণের েেত্র দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তবে বিদেশে বসবাস বা অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা দিতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দলিল সম্পন্ন করে এবং প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা সত্যায়িত করাতে হবে।

কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় মোক্তার নিজের নামে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে জায়গাজমি হস্তান্তর বা বিক্রি করেছেন। এ নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমাও কম হয় না। তাই দলিলে শর্তগুলো স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে।

যেকোনো সময় মোক্তারনামা বাতিল করা যায়। যে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল সে জেলায় রেজিস্ট্রারের বরাবর মোক্তারনামা বাতিলের জন্য আবেদন করতে হবে। রেজিস্ট্রার এটি রদ করবেন নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং তার জেলার রেজিস্ট্রি অফিসে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন। যদি রেজিস্ট্রি করা না হয়ে থাকে তাহলে আমমোক্তার বাতিল ঘোষণা করে নির্ধারিত স্ট্যাম্পে দলিল সম্পন্ন করা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • 0
  • 0
© 2025 Dhumketu . All Rights Reserved. || Created by FixiFite WEB SOLUTIONS.